দীর্ঘ দিন রাস্তার সংস্কার কাজ না করায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর সড়কগুলো শত শত গর্ত খানাখন্দে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দেখে মনে হয় এই সড়কগুলোর আর্তনাদ শোনার যেন কেউ নেই। অথচ প্রতিবছর হিলি স্থলবন্দর থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। কিন্তু এই স্থলবন্দরের প্রবেশের সড়কটির সংস্কার বা উন্নয়ন হয়নি আজ পর্যন্ত। সড়কের খানাখন্দে ইটসহ রাবিস দিয়ে সংস্কার করা হলেও অপ্রশস্থ ও ধারণ ক্ষমতা কম হওয়ায় ১৫ থেকে ৪০টন পর্যন্ত পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের কারণে সড়কগুলো বেশিদিন স্থায়ী হচ্ছে না।
সর্বশেষ ২০১০ সালে হিলি স্থলবন্দরের সড়কটি সংস্কার করা হয়। একই সময়ে অন্যান্য সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ধূলা বালি উপেক্ষা করে খুব কষ্ট করে চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে একটু পানিতে মানুষের ভোগান্তি পৌঁছায় চরমে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারকাজ শুরু হবে বলে শোনা গেলেও এখনও না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ক্ষোভে এই এলাকার মানুষ বলে ” বর্ষায় কাঁদা পানি আর খরায় ধূলো বালি এর নাম বাংলাহিলি “।
এতে ভোগান্তিতে পড়েছে যানবাহন চালকসহ সাধারণ মানুষ। চরম ঝুঁকি নিয়ে সড়কে আমদানি রফতানির পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্য যানবাহন চলছে। সংস্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমদানিকারকসহ স্থানীয়রা। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী ও পথচারীসহ সাধারণ মানুষকে। বর্ষার সময় দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশের একমাত্র সড়ক হিলি সীমান্তের চেকপোস্ট থেকে শুরু করে স্থলবন্দরের গেট পর্যন্ত বেহাল। স্থলবন্দরের চার মাথা থেকে হাকিমপুর উপজেলা পরিষদ, রাজধানী মোড় হয়ে মহিলা কলেজ, চেকপোস্ট সড়কের টেম্পুস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে বিরামপুর, স্থলবন্দর থেকে শুরু করে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত সড়কটির বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। হিলি চারমাথা মোড় থেকে সিপি হয়ে ফকিরপাড়া পর্যন্ত প্রধান সড়কের বেহাল দশার কারণে ইট বিছানো হয়েছে। অন্য দিকে চারমাথা মোড় থেকে দক্ষিণে রাজধানী মোড় পর্যন্ত রাস্তার উপরে ইট বিছিয়ে সলিং করা হয়েছে। সেগুলো এখন নষ্ট হতে শুরু করেছে যা বর্ষার শুরুতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে।
এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনের জন্য হিলি-জয়পুরহাট সড়কের শান্তিমোড়, রাজধানী মোড়, হিলি-দিনাজপুর সড়কের ফকিরপাড়া, হিলি-ঘোড়াঘাট সড়কের ডাঙ্গাপাড়া, জালালপুরসহ অনেক স্থানে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত। হাকিমপুরের হিলি চারমাথা পোর্ট থেকে দক্ষিণে রাজধানী মোড় প্রধান সড়ক দিয়ে কোচ, বাসসহ পণ্যবাহী ট্রাকগুলো দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা সিলেট ও চট্টগ্রামে যাতায়াত করে। বর্ষকালে এসব খাদে পানি থাকলে বোঝা যায় না এর অবস্থা। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকায় ভয় আর ভীতি নিয়ে চলাফেরা করছে সব ধরনের যানবাহনসহ পথচারীরা। শুষ্ক মৌসুমে কষ্ট করে চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে মানুষের ভোগান্তি পৌঁছায় চরমে।
রিক্সা চালক এমদাদ ও নির্মল রবিদাস জানায়, হাকিমপুরের হিলির সব সড়কে ছোটবড় গর্তে ভরা। রিকশা-ভ্যান চালাতে খুব সমস্যা হয়। এতটাই রাস্তা খারাপ যে যাত্রীরা বসে থাকতেও পারছে না। আয় কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আকরাম হোসেনে ও তাজ মিয়া জানান, দীর্ঘদিন সড়কগুলো সংস্কার না করায় বিভিন্ন স্থানে সড়কের পিচ উঠে গিয়ে ছোটবড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আর পথচারিদের চলাফেরা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, হিলি স্থলবন্দর থেকে প্রতিবছর সরকারের লক্ষ্যমাত্রার অধিক রাজস্ব দিয়ে আসছি। কিন্তু এর বিপরীতে বন্দরের সড়কগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। স্থলবন্দরের প্রধান সড়কটি অপ্রশস্থ ও খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি রফতানির পন্যবাহী ট্রাকসহ মানুষের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কামরুল হাসান সরকার জানান, হিলি স্থলবন্দরের চেকপোস্ট গেট থেকে শুরু করে জয়পুরহাট অংশ পর্যন্ত সড়কটি আগে ৪৮ ফুট ধরে নির্মাণকাজের টেন্ডার হয়েছে। জয়পুরহাট অংশের কাজ তারা শেষ করবে, আমাদের অংশে ফোরলেন হবে। এটির ওয়ার্ক ওর্ডার হয়তো খুব দ্রুত হয়ে যাবে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া হিলি থেকে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত সড়কটির প্রজেক্ট একনেকে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে।