আকুপাংচারে সুতোর মতো সরু স্টিলের সুচ শরীরের বিভিন্ন পয়েন্টে ফুটিয়ে নার্ভ উদ্দীপিত করে চিকিৎসা করা হয়। জেনে নিন বিশদে-
অস্বীকার করার উপায় নেই, আজ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ কম বেশি নানা শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত। বহু মানুষকে আজীবন ওষুধ খেয়ে স্বাভাবিক রাখতে হচ্ছে জীবনের ছন্দ। কিন্তু কখনও কখনও এভাবে ভাল থাকায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তাই হয়তো গোটা বিশ্ব ঝুঁকছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির দিকে। সেই দলে জায়গা করে নিয়েছে আকুপাংচার।
প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো এই চিকিৎসা পদ্ধতির জন্ম চিনে, যা আজ বিশ্বের ১২০টি দেশ গ্রহণ করেছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে তো মেডিক্যাল ইনশিয়োরেন্স পলিসির মধ্যেও আকুপাংচার অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। ১৯৭৯ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) আকুপাংচারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০৩ সালে ‘হু’ একটি তালিকা প্রকাশ করে, যাতে উল্লেখ আছে ১০৩টি শারীরিক সমস্যায় আকুপাংচার কার্যকর।
কীভাবে চিকিৎসা করা হয়
আকুপাংচারে সুতোর মতো সরু স্টিলের সুচ শরীরের বিভিন্ন পয়েন্টে ফুটিয়ে নার্ভ স্টিমুলেট করে চিকিৎসা করা হয়। ফিজিয়োলজি বলে, মানুষের শরীরের মধ্যেই সমস্ত রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে। সেখানে গড়বড় হলেই আমরা আক্রান্ত হই বিভিন্ন রোগে। অ্যালোপ্যাথি বা মডার্ন মেডিসিনের ক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীর শরীরের ঘাটতিগুলো অনুসন্ধান করে ওষুধ প্রয়োগ করে ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করেন। আকুপাংচারের কাজটাও তাই। পার্থক্য একটাই, এখানে ওষুধ খেতে হয় না। নার্ভ স্টিমুলেট করে শরীরের ভিতরে থাকা কেমিক্যালগুলোর পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে ঠিকমতো কাজ করানোই আকুপাংচারের কাজ। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে, হরমোনের ব্যালান্স ঠিক রেখে, স্নায়ুতন্ত্রকে ঠিক মতো পরিচালিত করে শরীরকে সুস্থ হতে সাহায্য করে আকুপাংচার।
যে সমস্যাগুলোর জন্য আকুপাংচার করানো হয়
বিভিন্ন ধরনের বাত, স্পোর্টস ইনজুরি, জয়েন্ট পেন, অ্যাজমা, অ্যালার্জি, মাথাযন্ত্রণা, প্রজননে সমস্যা, অনিদ্রা, প্যারালাইসিস, ক্রনিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস, বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে আকুপাংচার বিশেষভাবে কার্যকরী। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আকুপাংচার পোস্ট সার্জারি গা গোলানো, বমি এবং কার্ডিয়োমায়োপ্যাথির রোগীদের গা গোলানোর সমস্যা থেকে রেহাই দিয়েছে। প্যারালাইজড রোগীদের সচল করে তুলতেও ক্ষেত্র বিশেষে সফল হয়েছে আকুপাংচার। আজীবন ওষুধ খেয়ে বাত, জয়েন্ট পেনের মতো ক্রনিক সমস্যাগুলোকে ঠেকিয়ে রাখা যায়, কিন্তু রোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় না। এ সব ক্ষেত্রে আকুপাংচার রোগীকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সুস্থ করে তোলে— এমনই দাবি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। এই চিকিৎসা যেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন তেমনই খরচও নামমাত্র।
কোন কোন ক্ষেত্রে আকুপাংচার করাবেন না
এমন বহু মানুষ আছেন, যাঁরা একাধিক জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। সে ক্ষেত্রে যদি তিনি নির্দিষ্ট একটি রোগের জন্য আকুপাংচারের সাহায্য নিতে চান, সে রাস্তাও খোলা রয়েছে। অর্থাৎ অ্যালোপ্যাথির পাশাপাশি আকুপাংচার করানোয় কোনও বাধা নেই। শুধু মাত্র যাঁরা নিয়মিত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খান, তাঁরা স্টেরয়েডের ডোজ শেষ করার পরে চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন। মধুমেহ রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা (পিপি) ২০০-র নীচে নেমে এলে এই চিকিৎসা শুরু করা যায়।